প্রত্যয় নিউজডেস্ক: সিলেটে এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া নারীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের আগে অস্ত্রের মুখে স্বর্ণের চেইন, টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয় ধর্ষকরা। যাওয়ার সময় একজন বলে ওঠে ‘দেখ মেয়েটি তো সুন্দর’। এ কথা বলার পর অন্যরাও তার দিকে ফিরে তাকায়। এরপর তারা ঘুরে এসে জাপটে ধরে ওই নববধূকে। এতে প্রতিবাদ করেন সঙ্গে থাকা স্বামী। ধর্ষকরা এ সময় তার স্বামীকে মারধর করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
চিকিৎসা শেষে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে সিলেটের বিচারিক হাকিম আদালতে নিয়ে যান। মহানগর তৃতীয় হাকিম আদালতের বিচারক শারমিন খানম নীলার এজলাসে নির্যাতিত ওই নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে নির্যাতিত ওই নববধূকে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আদালতে নির্যাতিতা নারী প্রায় ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় ধরে তার ওপর চলা নির্যাতনের মর্মান্তিক ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বিচারককে জানান ‘তাদের বিয়ে বেশিদিন হয়নি। মাত্র কয়েক মাস হবে। এরই মধ্যে স্বামীকে নিয়ে তিনি শুক্রবার বেড়াতে যান এমসি কলেজে। বিকেলেই তারা কলেজের ক্যাম্পাসে গিয়ে ঢোকেন। সেখানে স্বামীর সঙ্গে ক্যাম্পাসের নানা জায়গায় ঘোরেন। তারা ক্যাম্পাস ঘুরে সন্ধ্যার পর পেছন দিক দিয়ে এমসি কলেজ থেকে বের হন। এমন সময় ক্যাম্পাসের পেছনের এলাকায় ধর্ষকরা অবস্থান করছিল। তারা নবদম্পতিকে দেখতে পেয়ে ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে তারা অস্ত্রের মুখে স্বর্ণের চেইন, টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়।
যাওয়ার সময় একজন বলে ওঠে দেখ মেয়েটি তো সুন্দর। এ কথা বলার পর অন্যরাও তার দিকে ফিরে তাকায়। এরপর তারা ঘুরে এসে জাপটে ধরে তাকে। এতে প্রতিবাদ করেন সঙ্গে থাকা স্বামী। ধর্ষকরা এ সময় তার স্বামীকে মারধর করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ সময় তিনিও চিৎকার করছিলেন। ধর্ষকরা তাকে যখন ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন পিছু পিছু যান স্বামী। তিনি গিয়ে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ঢোকেন। ধর্ষকরা তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে স্বামী গিয়ে তাদের বাধা দেন। ছাত্রাবাসের ভেতরেই তার স্বামীকে মারধর করে ধর্ষকরা। এক পর্যায়ে তাকে বেঁধে ফেলে।’
ওই নারী জানান, ‘স্বামীকে বেঁধে তারা তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। এ সময় তিনি সম্ভ্রম রক্ষার্থে তাদের হাতে-পায়ে ধরেন। কিন্তু এতে মন গলেনি ধর্ষকদের। এ সময় চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। ছাত্রাবাসের দ্বিতীয়তলা থেকে কয়েকজন যুবক নিচে নামতে চাইছিল। এ সময় তাদের ধমক দিয়ে আটকে দেয়া হয়। পরে পুলিশ গেলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়।’
এ ঘটনার পর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বাবলাকে নিয়ে শাহপরান থানার ওসি ধর্ষিতা নারী ও তার স্বামীকে এমসি কলেজের ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে সেখানে আরও কয়েকজন ছাত্রনেতা যান। উদ্ধারের পর ওই নারীকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা করা হয়।
এদিকে রোববার রাতে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বামী গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বলেন, ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে ধর্ষণের আগে তার স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল ধর্ষকরা। ৫০ হাজার টাকা না পেয়ে ধর্ষিতার কানের স্বর্ণের দুল ও গলার চেইন এবং স্বামীর মানিব্যাগ থেকে দুই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা।
তিনি আরও জানান, শুক্রবার বিকেলে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হন। ইচ্ছা ছিল সন্ধ্যার মধ্যেই বাসায় ফেরার। শাহপরান থেকে ফেরার পথে এমসি কলেজের গেটের সামনে গাড়ি থামিয়ে সিগারেট নিয়ে আসেন তিনি।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার ওই বাসিন্দা বলেন, গাড়িতে ওঠার পর পেছন থেকে একজন বলেন এই দাঁড়াও। তখন স্ত্রীকে বললাম, গাড়ির গ্লাসটা একটু নামাও কথা বলব। তারা বলেন না নেমে আস। গাড়ি থেকে নামার পর তারা দু’জন (সাইফুর ও অর্জুন) জিজ্ঞেস করে গাড়িতে কে? বললাম আমার স্ত্রী।
তখন তারা গালি দিয়ে বলেন, ‘তুই দালালির ব্যবসা করছ’। এই বলেই থাপ্পড় মারে আমাকে। তখন আমার স্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে আমার স্বামীকে মারছ কেন? চিল্লাচিল্লি শুরু করলে তারা বলে গাড়িতে ওঠ তোদের থানায় নিয়ে যাব। ভয় দেখিয়ে তারা তিন-চারজন আমার গাড়িতে ওঠে। আমাকে নিয়ে তারা পেছনে বসে আর স্ত্রীকে সামনে বসিয়ে তাদের একজন গাড়ি চালায়।
বললাম ঠিক আছে আমাকে আইনের আওতায় নিয়ে যাও, কোনো সমস্যা নেই। তারা ছাত্রাবাসে প্রবেশের রাস্তার কালভার্টে গিয়ে বলে তুই মানিব্যাগ বের কর। টাকা দে ৫০ হাজার। বললাম আমার কাছেতো এত টাকা নেই। দুই হাজার টাকা আছে নিয়ে নাও। এরপর আমাকে মারধর করে। স্ত্রীর স্বর্ণের কানের দুল ও গলার চেইন ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাদের একজন আমার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন ধর্ষিতার স্বামী।
তিনি আরও বলেন, স্ত্রীর চিৎকার শুনে বলি এরকম তো ঠিক না ভাই। এরপরই আমি আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। মাথায় কাজ করছিল না।